প্রকাশিত: ২২/০৭/২০১৯ ১২:০১ পিএম , আপডেট: ২২/০৭/২০১৯ ১২:০৩ পিএম

মুসলমানরা মনে করেন, পৃথিবীতে মহান রাব্বুল আলামীনের অনন্য নিদর্শন পবিত্র কাবা শরিফ। ভৌগোলিকভাবে গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে বরকতময় পবিত্র কাবার অবস্থান- এটাও অনেকের জন্য আশ্চর্যজনক বিষয়। কাবাগৃহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, তা পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও সুপ্রাচীন ঘর। কোরআনের ভাষায়, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটিই হচ্ছে এ ঘর, যা বাক্কায় (মক্কা নগরীতে) অবস্থিত।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৬)

ইসলামী জ্ঞানের তথ্যমতে, পৃথিবীতে ভূমির সৃষ্টি হয় বিশাল সাগরের মাঝে, এর মাঝে মক্কায় অবস্থিত কাবা ঘরের স্থলকে কেন্দ্র করেই। তাই, কাবার নিচের অংশটুকু অর্থাৎ কাবাঘরের জমিনটুকু হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম মাটি। ধীরে ধীরে এর চারপাশ ভরাট হয়ে সৃষ্টি হয় একটি বিশাল মহাদেশের। পরে এক মহাদেশ থেকেই সৃষ্টি হয় সাত মহাদেশের। মাটিতে রূপান্তর হওয়ার আগে কাবা সাদা ফেনা আকারে ছিল। সে সময় পৃথিবীতে পানি ছাড়া কিছু ছিল না। আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর। মাটি বিছানোর পর জমিন নড়তে থাকে। হেলতে থাকে। এর জন্য মহান আল্লাহ পাহাড় সৃষ্টি করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয় (হেলে না যায়)।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১৫)। এভাবেই পবিত্র কাবার বরকতে পৃথিবী স্থির হয়ে যায়। ধীরে ধীরে এখানে মানবসভ্যতার গোড়াপত্তন হয়।

সৃষ্টির আদিকাল থেকেই আল্লাহ পবিত্র কাবা শরিফকে তার মনোনীত বান্দাদের মিলনমেলাস্থল হিসেবে কবুল করেছেন। দুনিয়া জুড়ে মুসলমানদের কিবলা এই কাবা শরিফ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা ও শত্রুদের আক্রমণের কারণে বেশ কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পবিত্র কাবা শরিফ। তাই বেশ কয়েকবারই ক্ষতিগ্রস্ত কাবাকে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক তথ্য মতে, কাবাকে এ পর্যন্ত ১২ বার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন বিপর্যয়ের হাত থেকে সংরক্ষণ করতে কাবা শরিফকে সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে আধুনিক ও শক্তিশালী প্রযুক্তির প্রয়োগে সংস্কার করা হয়। কাবা পুনঃসংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৯৬ সালে হাতিমে কাবাও পুনঃনির্মাণ করা হয়।

পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণ-পুনঃনির্মাণে বিভিন্ন যুগে হজরত আদম (আ.), হজরত ইব্রাহিম (আ.), হজরত ইসমাইল (আ.) এবং আখেরি নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)ও অংশগ্রহণ করেছিলেন। নবী ইব্রাহিমের (আ.) আমল থেকেই মূলত পবিত্র কাবা শরিফ আয়তক্ষেত্র আকৃতির ছিল। ইসলামের আগমনের পূর্বে কুরাইশরা যখন পবিত্র কাবাকে পুনঃনির্মাণ করে তখন তহবিলের অভাবে পবিত্র কাবা শরিফের পুরো কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি তারা। যে স্থানটি তখন নির্মাণ করতে পারেনি সেই স্থানটিকে বলা হয় ‘হাতিমে কাবা’। এটি কাবারই অংশ। এ কারণে হাতিমে কাবাকে তাওয়াফে অন্তর্ভূক্ত করতে হয়। যা একটি ছোট্ট গোলাকার প্রাচীর দ্বারা চিহ্নিত।

পবিত্র কাবা শরিফের এক কোণে সংযুক্ত ‘হাজরে আসওয়াদ’ কালো পাথরটি আগে আকারে বড় ছিল। বর্তমানে এ পাথরটি ভেঙে ৮ টুকরায় বিভিন্ন সাইজে বিভক্ত। যা একটি সিলভার রংয়ের ফ্রেমে একত্র করে কাবা শরিফের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে লাগানো। পাথরটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বন্যাসহ অনেকবার চুরি ও জালিয়াতির চেষ্টার কারণে অনাকাঙ্খিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। হাজরে আসওয়াদের প্রথম সিলভার ফ্রেমটি তৈরি করেছিলেন আবদুল্লাহ বিন জুবাইর।

প্রাক ইসলামি যুগ থেকে এখন পর্যন্ত কাবা শরিফের চাবি একটি পরিবারের কাছেই রয়েছে। সম্মানিত এই পরিবারটি হলো বনু তালহা গোত্র। এ গোত্র গত ১৫শ শতাব্দী ধরে এ দায়িত্ব পালন করছে। এটি ওই পরিবারের জ্যৈষ্ঠ সদস্যরা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হন।

বছরে দুই বার এর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়। প্রথমবার করা হয় শাবান মাসে আর দ্বিতীয় বার করা হয় জিলকদ মাসে। এ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বনু তালহা তথা আলশিবি পরিবারের লোকেরাই করে থাকেন।

পবিত্র জমজমের পানি, তায়েফ গোলাপ জল এবং বহু মূল্যবান ‘ঊড’ তৈল দিয়ে একটি পরিষ্কার মিশ্রণ তৈরি করে তা দিয়েই পবিত্র কাবা শরিফ পরিষ্কার করা হয়। পবিত্র নগরী মক্কার গভর্নর এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে আমন্ত্রণ জানান।

একটা সময়ে পবিত্র কাবা শরিফের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এ পবিত্র ঘরে প্রবেশ করে ইবাদাত-বন্দেগিও করতো। হজের সময় তীর্থযাত্রীরা ইচ্ছা করলে এতে প্রবেশ করতে পারতো।কিন্তু হাজিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ঘরের নিরাপত্তার জন্যই এখন কেউ ইচ্ছা করলেও অভ্যন্তরে যেতে পারে না। এটা এখন মাঝে মাঝে বিশেষ বিশেষ মেহমানদের জন্য খোলা হয়।

পবিত্র কাবা শরিফ সম্পর্কে অবিশ্বাস্য হলেও চিরন্তন সত্য যে, এর চারদিকে ঘোরা অর্থাৎ তাওয়াফ কখনো বন্ধ হয় না। তবে হ্যাঁ, নামাজের সময় যখন মুয়াজ্জিন জামাতের জন্য ইক্বামাত দেন ঠিক নামাজের সময় তাওয়াফকালীন অবস্থায় যে যেখানে থাকে সেখানে দাঁড়িয়েই নামাজে অংশগ্রহণ করে। নামাজের সালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গে আবার তাওয়াফ শুরু হয়ে যায়।

উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. খালিদ বাবতিনের গবেষণায় দেখা গেছে, সৌদি আরবে অবস্থিত পবিত্র কাবাই পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু। (আল আরাবিয়া : ২৩ জুলাই, ২০১২)

আরেকটি বিষয় হলো, বছরের বিশেষ একটি দিন দুপুরে সূর্য ঠিক মাথার ওপর থাকে। তখন পবিত্র কাবা বা মক্কায় অবস্থিত কোনো অট্টালিকায় ছায়া দৃষ্টিগোচর হয় না। যেমন – ২০১৪ সালের ২৮ মে দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে সূর্য ছিল পবিত্র কাবার ঠিক মাথার ওপর। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটি হয় না।

বর্তমানে কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদী সরকারের প্রধান (বাদশাহ) কাবা শরীফের মোতাওয়াল্লির দায়িত্বে থাকেন।

পাঠকের মতামত

তুরস্কে কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন বাংলাদেশি হাফেজ

ইসলামী ঐতিহ্যের স্মৃতি বিজড়িত তুরস্কে অনুষ্ঠিত ৯ম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন বাংলাদেশি হাফেজ, ...